![]() |
| দারোগাবাবু এবং হাবু |
দারোগাবাবু এবং হাবু
ভবানীপ্রসাদ মজুমদার
থানায় গিয়ে সেদিন ভোরে
বললে কেঁদেই হাবু,
নালিশ আমার মন দিয়ে খুব
শুনুন বড়োবাবু।
চার চারজন ভাই আমরা
একটা ঘরেই থাকি,
দুঃখে আমি সারা দিন-রাত
ভগবানকেই ডাকি।
বড়দা ঘরেই সাতটা বেড়াল
পোষেন ছোটো-বড়ো,
মেজদা পোষেন আটটা কুকুর
যতই বারণ করো।
সেজদা পাগল, দশটা ছাগল
রাখেন ঘরেই বেঁধে,
গন্ধে তাদের প্রাণ যায় যায়
মরছি কেঁদে কেঁদে।
দারোগাবাবু বললে, হাবু
তোমরা কি সব ভুলো
সদাই খুলে রাখবে ঘরের
জানলা দরজাগুলো।
শুনেই হাবু বেজায় কাবু
বললে করুণ সুরে,
দেড়শো পোষা পায়রা আমার
যাবেই যে সব উড়ে।
🪶 কবিতার সারাংশ (Summary):
হাবু নামের এক ব্যক্তি থানায় গিয়ে দারোগাবাবুর কাছে অভিযোগ করে। সে বলে, তাদের চার ভাই একই ঘরে থাকে এবং প্রত্যেক ভাই পোষা প্রাণীতে ঘর ভরিয়ে রেখেছে—
-
বড়দা সাতটা বিড়াল,
-
মেজদা আটটা কুকুর,
-
সেজদা দশটা ছাগল,
আর -
হাবুর নিজের আছে দেড়শো পায়রা!
ঘরে এত প্রাণী থাকার কারণে দুর্গন্ধ, বিশৃঙ্খলা আর কষ্টে হাবুর জীবন দুর্বিষহ। দারোগাবাবু উপদেশ দেন যেন জানলা-দরজা খোলা রাখে। তখন হাবু কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে—তাহলে তার দেড়শো পায়রা সব উড়ে যাবে!
😂 হাস্যরস:
কবিতাটি রম্যরসে ভরা।
হাবুর অভিযোগ যত এগোয়, ততই পরিস্থিতি মজার হয়ে ওঠে।
শেষে যখন হাবুর নিজেরই দেড়শো পায়রা থাকার কথা জানা যায়, পাঠক হাসতে বাধ্য হয়।
🧠 মূল ভাব (Theme):
মানুষ প্রায়ই নিজের দোষ না বুঝে অন্যের দোষ নিয়ে অভিযোগ করে।
হাবুও তাই করেছে—অন্য ভাইদের প্রাণীদের নিয়ে অভিযোগ করলেও, তার নিজের পায়রার দলই আসল ঝামেলা।
এর মাধ্যমে কবি মানুষের আত্মবিরোধিতা ও হাস্যকর আচরণকে রসাত্মকভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
🗣️ ভাষা ও ছন্দ:
-
ভাষা সহজ, প্রাঞ্জল, কথ্যরীতিতে লেখা।
-
ছন্দ ও মিল সুন্দরভাবে বজায় রাখা হয়েছে (যেমন “হাবু–বাবু”, “বড়ো–ঘরো”, “কুকুর–বারণ করো” ইত্যাদি)।
-
এতে গল্পের ঢঙে ছন্দময় কৌতুক তৈরি হয়েছে।
🎯 শিক্ষণীয় দিক:
নিজের ভুল বুঝতে শেখা, এবং অন্যকে দোষারোপ করার আগে আত্মসমালোচনা করার প্রয়োজন—এই শিক্ষাই লুকিয়ে আছে কবিতার রসাত্মক পরিসরে।
![]() |
| দারোগাবাবু এবং হাবু |
১. ঠিক শব্দটি বেছে নিয়ে বাক্যটি আবার লেখ :
১.১ হাবু থানায় গিয়েছিল ( বেড়াতে/ অভিযোগ জানাতে/ চিকিৎসা করাতে/ হারানো পাখি খুঁজতে)
উত্তর - হাবু থানায় গিয়েছিল অভিযোগ জানাতে।
১.২. বাড়িতে পোষা হয় এমন পাখির মধ্যে পড়ে না ( টিয়া/পায়রা/ময়না/ কোকিল)
উত্তর– বাড়িতে পোষা হয় এমন পাখির মধ্যে পড়ে না কোকিল।
১.৩. হাবু ও তাঁর দাদাদের পোষা মোট পশু- পাখির সংখ্যা ( ১৭৫/১৫০/১৭০/ ২৫)
উত্তরঃ হাবু ও তাঁর দাদাদের পোষা মোট পশু- পাখির সংখ্যা ১৭৫।
১. ঠিক শব্দটি বেছে নিয়ে বাক্যটি আবার লেখ :
১.১ হাবু থানায় গিয়েছিল ( বেড়াতে/ অভিযোগ জানাতে/ চিকিৎসা করাতে/ হারানো পাখি খুঁজতে)
উত্তর :- হাবু থানায় গিয়েছিল অভিযোগ জানাতে।
১.২. বাড়িতে পোষা হয় এমন পাখির মধ্যে পড়ে না ( টিয়া/পায়রা/ময়না/ কোকিল)
উত্তর– বাড়িতে পোষা হয় এমন পাখির মধ্যে পড়ে না কোকিল।
১.৩. হাবু ও তাঁর দাদাদের পোষা মোট পশু- পাখির সংখ্যা ( ১৭৫/১৫০/১৭০/ ২৫)
উত্তরঃ হাবু ও তাঁর দাদাদের পোষা মোট পশু- পাখির সংখ্যা ১৭৫।
২ ‘ক’ এর সঙ্গে ‘খ’ স্তম্ভ মিলিয়ে লেখো।
|
ক |
খ |
|
নালিশ |
অভিযোগ |
|
বারন |
নিষেধ |
|
পাগল |
উন্মাদ |
|
সদাই |
সবসময় |
|
কাবু |
কাহিল |
উত্তর-
বিশেষ্য - পায়রা, থানা, বড়বাবু
বিশেষণ - কাবু, খুব, নালিশ, করুন,পোষা, দুঃখ, চারজন
৪ ‘ কেঁদে- কেঁদে’ এরকম একই শব্দকে পাশাপাশি দুবার ব্যবহার করে পাচটি নতুন শব্দ তৈরী কর।
উঃ রোজ রোজ, নেচে নেচে, হেসে হেসে, দিন দিন, মনে মনে।
৫ ক্রিয়ার নীচে দাগ দাও
৫.১ বললে কেঁদেই হাবু।
৫.২ সাতটা বেড়াল পোষেন ছোটো বড়ো।
৫.৩ বললে করুণ সুরে।
৫.৪ যাবেই যে সব উড়ে।
৫.৫ ভগবানকেই ডাকি।
৬ বাক্য রচনা কর
নালিশ– অকারণে কারো নামে নালিশ করা উচিত নয়।
ভগবান– বিপদে- আপদে ভগবানের নাম স্মরণ করলে মনে জোর বাড়ে।
বারণ– মা দুপুরের রোদে বাইরে খেলতে বারণ করেছেন।
করুণ– আহত কুকুরছানাটি করুণ সুরে কাঁদছে।
ভোর– ভোর বেলা ঘুম থেকে ওঠা শরীরের পক্ষে ভালো।
৭ ঘটনাক্রম সাজিয়ে লেখো
৭.১ হাবু থানার বড়বাবুর কাছে কান্নাকাটি করে নালিশ জানাল।
৭.২ জীবযজন্তুর গন্ধে হাবুর প্রাণ যায় যায়।
৭.৩ হাবুরা চারভাই একটা ঘরেই থাকে।
৭.৪ বড়দা সাতটা বেড়াল, মেজদা আটটা কুকুর, সেজদা দশটা ছাগল ও হাবু নিজে দেড়শো পায়রা পোষে।
৭.৫ দারোগাবাবু উত্তর শুনে হাবু বেজায় কাতর হয়ে পড়ল।
উত্তর:
১) ৭.১ হাবু থানার বড়বাবুর কাছে কান্নাকাটি করে নালিশ জানাল।
২) ৭.৩ হাবুরা চারভাই একটা ঘরেই থাকে।
৩) ৭.৪ বড়দা সাতটা বেড়াল, মেজদা আটটা কুকুর, সেজদা দশটা ছাগল ও হাবু নিজে দেড়শো পায়রা পোষে।
৪) ৭.২ জীবযজন্তুর গন্ধে হাবুর প্রাণ যায় যায়।
৫) ৭.৫ দারোগাবাবু উত্তর শুনে হাবু বেজায় কাতর হয়ে পড়ল।
৮. কবিতাতে অন্তমিল আছে এমন পাঁচ জোড়া শব্দ লেখো
উত্তর: হাবু-বড় বাবু, থাকি-ডাকি, বড়ো- করো, ভুলো- গুলো, বেঁধে – কেঁদে।
৯ বাক্য বাড়াওঃ
৯.১ হাবু গিয়েছিল (কোথায়? কখন?)
উত্তর: হাবু ভোরে থানায় গিয়েছিল।
৯.২ বড়দা পোষেন বেড়াল। (কয়টি? কেমন?)
উত্তর: বড়দা পোষেন ছোট-বড় আটটি বেড়াল।
৯.৩ হাবু ভগবানকে ডাকে। (কেন? কখন?)
উত্তর: হাবু দুঃখে সারা-দিন রাত ভগবানকে ডাকে।
৯.৪ দারোগাবাবু বলেন ঘরের জানলা রাখতে। (কাকে?) দরজা খুলে
উত্তর: দারোগাবাবু হাবুকে বলেন ঘরের জানলা দরজা খুলে রাখতে
৯.৫ হাবুর পায়রা উড়ে যাবে। (কয়টি)
উত্তর: হাবুর দেড়শো পায়রা উড়ে যাবে।
১০.১ ছোটোদের জন্য ছড়া কবিতা লিখেছেন এমন দুজন কবির নাম বল।
উত্তর: সুকুমার রায়, ভবানীপ্রসাদ মজুমদার।
১০.২ তোমার পাঠ্য কবিতাটির কবি কে?
উত্তর: ভবানীপ্রসাদ মজুমদার।
১০.৩ তাঁর লেখা দুটি বইয়ের নাম লেখো
উত্তর: মজার ছড়া, নাম তার সুকুমার।
১১ নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো
১১.১ হাবু কোথায় গিয়ে কার কাছে নালিশ জানিয়েছিল?
উত্তর: কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের লেখা 'দারোগাবাবু এবং হাবু' কবিতার প্রধান চরিত্র হাবু থানায় গিয়ে দারোগাবাবুর কাছে নালিশ জানিয়েছিলেন।
১১.২ হাবুর বড়দা, মেজদা ও সেজদা ঘরে কি কি পোষেন?
উত্তর: কবি, ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের লেখা "দারোগাবাবু এবং হাবু" কবিতার হাবুর বড়দা ছোট-বড় সাতটি বিড়াল পোষেন, তাঁর মেজদা সেই ঘরেই আটটি কুকুর পোষেন ও তাঁর সেজদা দশটা ছাগল পোষেন।
১১.৩ হাবুর করুণ অবস্থার জন্য সে নিজেও কীভাবে দায়ি ছিল বলে তোমার মনে হয়?
উত্তর: একটি ঘরের মধ্যেই হাবুর দাদারা বিড়াল, কুকুর ও ছাগল পুষত। কিন্তু হাবু নিজেও আলাদা নয় সে ঘরের মধ্যে দেড়শো পায়রা পুষত। আর সেই পায়রা যাতে উড়ে না যায় তাই সে জানলা দরজা বন্ধ করে রাখত। তাই সারা ঘর দুর্গন্ধে ভরে থাকত। অর্থাৎ হাবুর করুণ অবস্থার জন্য সে নিজেও কিছুটা দায়ী।
১১.৪ দারোগা বাবু হাবুকে যে পরামর্শ দিল তা হাবুর পছন্দ হল না কেন?
উত্তর: হাবুর তিন জন দাদা একই ঘরে অনেক বিড়াল, কুকুর ও ছাগল পুষত ও তাই দুর্গন্ধে হাবুর প্রাণ যায় যায়। তাই দারোগা বাবু তাকে পরামর্শ দিয়েছিল যে ঘরের জানলা, দরজা খুলে রাখতে। কিন্তু দারোগা বাবুর এই উপদেশ হাবুর পছন্দ হয় নি কারণ তাহলে হাবুর পোষা দেড়শো পায়রা উড়ে যাবে।
১১.৫ দারোগাবাবুর কাছে হাবু তাঁর যে দুঃখের বর্ণনা দিয়েছিল তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর:ভোরবেলায় থানায় গিয়ে দারোগাবাবুর কাছে তাঁর দুঃখের কথা বলে। তারা চার ভাই একই ঘরে থাকে এবং সেই ঘরেই বড়দা সাতটি বিড়াল, মেজদা আটটি কুকুর ও সেজদা দশটি ছাগল পোষেন। এর ফলে দুর্গন্ধে হাবুর প্রাণ বেরিয়ে যায়। মনের দুঃখে সে সারাদিন রাত ভগবানকে ডাকে।
🪶 দারোগাবাবু এবং হাবু —অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর
❓১. কবিতার কবি কে?
উত্তর: এই কবিতার কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার।
❓২. হাবু থানায় গিয়ে কেন কাঁদতে কাঁদতে নালিশ করল?
উত্তর: হাবু থানায় গিয়ে নালিশ করল, কারণ তার ভাইয়েরা ঘরে অনেক প্রাণী পুষে ঘর ভরে ফেলেছে। এতে দুর্গন্ধ ও কষ্টে তার থাকা মুশকিল হয়ে গেছে।
❓৩. হাবুর কতজন ভাই ছিল এবং তারা কী পোষে?
উত্তর: হাবুর তিন ভাই ছিল।
-
বড়দা সাতটা বিড়াল পোষে,
-
মেজদা আটটা কুকুর পোষে,
-
সেজদা দশটা ছাগল রাখে ঘরে বেঁধে।
❓৪. দারোগাবাবু হাবুকে কী পরামর্শ দিলেন?
উত্তর: দারোগাবাবু হাবুকে বললেন যেন ঘরের জানলা ও দরজাগুলো সবসময় খোলা রাখে।
❓৫. দারোগাবুর পরামর্শে হাবু কী বলল?
উত্তর: হাবু কান্নাজড়িত গলায় বলল, “দেড়শো পোষা পায়রা আমার যাবেই যে সব উড়ে!”
অর্থাৎ জানলা-দরজা খোলা রাখলে তার নিজের পায়রাগুলো পালিয়ে যাবে।
❓৬. কবিতার হাস্যরস কোথায়?
উত্তর: কবিতার হাস্যরস এই যে, হাবু অন্য ভাইদের প্রাণীদের জন্য নালিশ করতে এলেও, তার নিজেরই দেড়শো পায়রা আছে। অর্থাৎ সে নিজেও তেমনি অপরাধী!
❓৭. কবিতাটি আমাদের কী শেখায়?
উত্তর: কবিতাটি শেখায়—অন্যের দোষ দেখার আগে নিজের দোষ বুঝতে হবে। নিজেকে না বুঝে শুধু অন্যকে দোষ দিলে তা হাস্যকর হয়ে যায়।
❓৮. কবিতার ভাষার বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তর: ভাষা সহজ, ছন্দময় ও কথ্যরীতিতে লেখা। পড়তে পড়তেই গল্পের মতো আনন্দ দেয়।
❓৯. হাবু দারোগাবাবুকে কীভাবে বলেছিল?
উত্তর: হাবু করুণ স্বরে কাঁদতে কাঁদতে নিজের দুঃখের কথা বলেছিল।
❓১০. এই কবিতাটি কী ধরনের কবিতা?
উত্তর: এটি একটি হাস্যরসাত্মক কবিতা (Humorous Poem)।
সুপ্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজ এখানেই শেষ করছি আগামীতে অন্য নতুন পাঠে তোমাদের সামনে হাজির হব ততক্ষণে সুস্থ থেকো, ভালো থেকো ধন্যবাদ।

