![]() |
ব্যায়াম ও তার উপকারিতা / Yoga and its Benefits |
10 টি ব্যায়াম ও তার উপকারিতা
যোগাসন এবং তাদের উপকারিতা
1.পদ্মাসন
এই আসন করার সময় এমনভাবে একটি পায়ের ওপর অন্যটিকে স্থাপন করা হয়, যাতে পায়ের অবস্থান পদ্মের পাপড়ির মতো দেখতে লাগে। তাই এই আসনকে পদ্মাসন বা কমলাসন বলে।
পদ্মাসন এর উপকারিতাঃ
① এই আসন নিয়মিত অনুশীলন করলে দেহের শিথিলতা দূর হয়;
② অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির ক্রিয়া স্বাভাবিক হয়;
③ পায়ের গাঁটের বাত সেরে যায়;
④ স্নায়বিক উত্তেজনা, হাঁপানি, অনিদ্রা ইত্যাদি দূর হয়;
⑤ দেহের কাঠামো সুন্দর হয়;
⑥কাজে মনঃসংযোগ বৃদ্ধি পায়, স্মৃতিশক্তি বাড়ে এবং মনে প্রশান্তি আসে।
2.বজ্রাসন
বজ্রাসন প্রকৃতপক্ষে প্রার্থনা করার একটি অবস্থান। এই আসনের দ্বারা দেহকে অতি সহজে বিচলনহীন অবস্থায় রাখা যায়। নিয়মিত এই আসন অনুশীলনে দেহ বজ্রের মতো শক্তিশালী এবং সুন্দর হয়। মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে এই আসনটি হল এক প্রকার আধ্যাত্মিক ক্রিয়ার ভঙ্গি।
বজ্রাসন এর উপকারিতাঃ
① এই আসন পরিপাকতন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ায়। আহারের পর 5-10 মিনিট এই আসন করলে খাদ্যবস্তু ভালোভাবে হজম হয়।
② শরীরে গ্যাস ও অম্বলের সমস্যা দূর হয়।
③ হাঁটু, পা, থাই ও গোড়ালির ব্যথাও দূর হয়।
④ এই আসন নিয়মিত করলে রক্তে শ্বেত রক্তকণিকার পরিমাণ বাড়ে।
⑤ এতে দেহের নিম্নাংশ মজবুত হয়।
3.শবাসন
এই আসনে অবস্থানকালে দেহ শব বা মৃতের ন্যয় স্থিরভাবে শায়িত থাকে, তাই একে শবাসন বা মৃতাসন বলা হয়। যে- কোনো আসন শুরু করার আগে এবং শেষ করার পরে এই আসনটি করতে হয়। এই আসনের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এই আসন করলে খুব তাড়াতাড়ি দেহ শিথিল হয়।
শবাসন এর উপকারিতাঃ
① এই আসন দেহের মাংসপেশিকে শিথিল করে, কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
②এতে দেহের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হয় বলে, দেহের ক্লান্তি দ্রুত দূর হয়।
③ উচ্চ রক্তচাপ, নিদ্রাহীনতা, হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
④মানসিক চিন্তা দূর করে।
⑤দেহে শক্তির পুনস্থাপনে সহায়তা করে।
4.ভুজঙ্গাসন
'ভুজঙ্গ' শব্দটি সংস্কৃত শব্দভাণ্ডার থেকে নেওয়া হয়েছে। 'ভুজঙ্গ' শব্দটির অর্থ সাপ। এই আসনে অবস্থান করলে, আসনকারীর দেহটিকে ফণা তোলা সাপের মতো দেখায়। সেই কারণে, এই আসনটিকে ভুজঙ্গাসন বলা হয়।
ভুজঙ্গাসন এর উপকারিতাঃ
① এই আসনের ফলে কোমর ও ঘাড়ের পেশিসমূহের রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়। কোমরের বাত ও ঘাড়ের স্পন্ডিলাইটিস সেরে যায়।② শ্বাসনালি মোটা হয়। ও স্নায়ুতন্ত্র, বৃক্ক ও যকৃতের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। ④ হজম ভালো হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। মেরুদণ্ড নমনীয় হয় এবং বুকের খাঁচার আয়তন বৃদ্ধি পায়।
5.শলভাসন
'শলভ' কথার অর্থ পতঙ্গ। এই আসনরত অবস্থায় দেহের ভঙ্গিমা পতঙ্গের মতো দেখায়। তাই শলভাসন নামকরণ করা হয়েছে।
শলভাসন এর উপকারিতাঃ
① এই আসন অভ্যাসে কোমরের বাত ও স্পন্ডিলাইটিস রোগের উপশম হয়। পেট, থাই ও পায়ের পেশি শক্তিশালী হয়। ③ উদর অংশের মেদ কমাতে সাহায্য করে। হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। বৃক্ক ও অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
6.ধনুরাসন
এই আসনে অবস্থানরত অবস্থায় দেহের ভঙ্গিমা ধনুকের মতো হয়, তাই ধনুরাসন নামটি ব্যবহার করা হয়। এই আসনটি প্রকৃতপক্ষে ভুজঙ্গাসন ও শলভাসনের সংযুক্ত রূপ।
ধনুরাসন এর উপকারিতাঃ
① এই আসন অভ্যাসের ফলে সাধারণ স্বাস্থ্য ভালো হয়। ② এই আসন নিয়মিত অভ্যাসের ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং পরিপাক ক্ষমতা বাড়ে, শরীরের মেদ কমে। ③ এই আসন বাত, অজীর্ণ, হাঁপানি, অন্ত্রের অসুখ প্রভৃতি সারাতে সাহায্য করে। ④ এটি পেটের এবং কোমরের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। ⑤ এই আসন নিয়মিত অভ্যাসে মেরুদণ্ড নমনীয় হয় এবং বুকের খাঁচা বড়ো হয়। এটি ক্ষুধা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
7.পশ্চিমোত্থানাসন
এই আসনটিতে দেহের পশ্চিম দিক অর্থাৎ পৃষ্ঠদেশের সমস্ত পেশির প্রসারণ ঘটে। এই আসন অভ্যাস করার সময় দেহে কোনো রকম ঝাঁকুনি দেওয়া উচিত নয়। যেসব ব্যক্তি হার্নিয়া, অ্যাপেন্ডিসাইটিস প্রভৃতি রোগে ভুগছে এবং যাদের যকৃৎ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছে, তাদের এই আসন করা অনুচিত।
পশ্চিমোত্থানাসন এর উপকারিতাঃ
① এই আসন নিয়মিত অভ্যাস করলে, কোষ্ঠকাঠিন্য, অর্শ, মধুমেহ, গ্যাস্ট্রাইটিস প্রভৃতি রোগ নিরাময় হয়। এতে উদরের পেশিসমূহ শক্তিশালী হয়। পেটের মেদ কমে, যকৃৎ ও প্লীহা আকারে বৃদ্ধি পেলে, এই আসন অভ্যাসের মাধ্যমে, তাদের আকার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায়। ও মুত্রগ্রন্থি, পাকস্থলী, প্লীহা ও যকৃতের ক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে। এটি আমাশয় নিরাময়েও সহায়তা করে।
8.অর্ধচন্দ্রাসন
এই আসনরত অবস্থায় অংশগ্রহণকারীর দেহকে অর্ধচন্দ্রের মতো দেখায়, তাই একে অর্ধচন্দ্রাসন বলে।
অর্ধচন্দ্রাসন এর উপকারিতাঃ
① এই আসন নিয়মিত অভ্যাস করলে পা, কোমর এবং মেরুদণ্ড নমনীয় হয়। ② এতে কোমর অংশের বাত সেরে যায়। কোমরে অযথা চর্বি থাকলে কমায়। ও স্নায়ুতন্ত্র ও মেরুদণ্ডের নীচের অংশকে শক্তিশালী করে তোলে।ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। ④ বৃক্কের কাজ স্বাভাবিকভাবে চলে। বৃক্কের কাজকর্ম ভালো হয়।
9.পদহস্তাসন
সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে হাত ও পা সামনের দিকে বাঁকিয়ে একত্রে অবস্থান করানো হয় বলে, একে পদহস্তাসন বলা হয়।এটি একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসন।
পদহস্তাসন এর উপকারিতাঃ
① এই আসন নিয়মিত অভ্যাস করলে তলপেটের পেশির সঙ্কোচন ঘটে। পরিপাকতন্ত্র ও রেচনতন্ত্রের ক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে।ও কোষ্ঠকাঠিন্য ও অজীর্ণ দূর হয়। ডায়াবেটিস রোগের উপশম ঘটে।
10. অর্ধমৎস্যেন্দ্রাসন এর উপকারিতাঃ
① এই আসন নিয়মিত অভ্যাস করলে মেরুদণ্ডের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।② মেরুদণ্ড নমনীয় হয়। সুষুম্নাকাণ্ডে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে এবং স্পন্ডিলাইটিস রোগের উপশম ঘটে। পিঠের বাত, কটি বা লাম্বার অঞ্চলের বাত ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।